তোমরা আল্লাহর দিকে দৌড়াও

 মজার একটি শিক্ষণীয় ঘটনা


আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন— فَفِرُّوۡۤا اِلَی اللّٰهِ -আল্লাহর দিকে দৌড়াও।" (৫১:৫০) 

আরবি 'ফাররা' শব্দের অর্থ- কেউ একজন ভয়ে ছিল এবং সে জানতো যে সে বিপদে আছে, তাই সে কোনো একটি আশ্রয়স্থলের দিকে দৌড়ে গিয়ে নিজেকে বিপদ থেকে বাঁচালো। আরবি 'ফাররা' শব্দের অর্থ এটাই। বিপদ থেকে নিরাপদ কোনো স্থানে দৌড়ে পালানো। 

আমাদের ক্লাসিক্যাল বইগুলোতে দৌড়ে পালানোর পাঁচটি ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিক কিসের থেকে আপনি পালাচ্ছেন? আর ঠিক কিসের দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন?   

এক নাম্বার: কুফর থেকে ঈমানের দিকে। আগের যুগের একজন আলেম সাহেল ইবনে আব্দুল্লাহ বলেছেন- "আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু থেকে পালিয়ে এসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দিকে ধাবিত হই।" আমাদের অন্তর আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর সাথে যুক্ত থাকা উচিত নয়।  

দুই নাম্বার: অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের দিকে দৌড়ানো। আমরা সব ধরণের অজ্ঞতা থেকে পালিয়ে বেড়াই। বিশেষ করে ধর্ম বিষয়ে আমরা অজ্ঞ থাকি না। আমরা দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের দিকে দৌড়ে এগিয়ে যাই। জেনে রাখুন, আল্লাহ হলেন আল-আলিম। অর্থাৎ যিনি সবকিছু জানেন। আর তিনি আমাদের জন্য 'মুয়াল্লিম' বা শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (স) কে। আমাদের ধর্ম হলো ইলম নিয়ে। আমাদের সমগ্র ধর্মের ভিত্তিই হলো আল্লাহ সম্পর্কে জানা এবং কিভাবে তাঁর ইবাদাত করতে হবে তা শেখা। 

তিন নাম্বার: আমরা আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে পালিয়ে এসে তাঁর আনুগত্যের দিকে দৌড়ে এগিয়ে যাই। ইবনে আব্বাস (রা) এই আয়াতের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন- আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে পালাও আর তাঁর আনুগত্যের দিকে এগিয়ে যাও। আমরা আরো বলতে পারি- আল্লাহর শাস্তি থেকে পালিয়ে তাঁর রহমতের দিকে এগিয়ে যাও। 

চার নাম্বার: আমরা আমাদের প্রয়োজনগুলোর জন্য আল্লাহর দিকে দৌড়াই। যখনি আমরা বিপদে পড়ি, যখনি আমাদের কিছুর দরকার হয় সবার আগে আমাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট চাওয়া উচিত। কুরআনে এসেছে- وَ یَدۡعُوۡنَنَا رَغَبًا وَّ رَهَبًا - "তারা আমাকে ডাকতো আশা নিয়ে ও ভীত হয়ে।" (২১:৯০) 

পাঁচ নাম্বার: গাফলতি থেকে পালিয়ে ইয়াকীনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন জীবন থেকে পালিয়ে উদ্দেশ্যপূর্ণ এবং মহৎ জীবনের দিকে দৌড়ে যাওয়া। আমাদের নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আল্লাহ আমাদেরকে এবং তাদেরকে পথ দেখাক। তারা শুধু টিকটক, ফেইসবুক, ইউটিউব, গেইমস নিয়ে সারাক্ষণ মেতে থাকে। এভাবে নিজেদের সকল অনুভূতিগুলোকে অসাড় করে ফেলছে। এভাবে তো আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বড় করতে পারি না। 

তাদেরকে শেখাতে হবে— "ফাফিররু ইলাল্লাহ-আল্লাহর দিকে দৌড়াও।" (৫১:৫০) এই গাফলতি পরিত্যাগ করো। এই অমনোযোগিতা পরিহার করো। আল্লাহকে খোঁজ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জানো। কারণ যখন তুমি আল্লাহকে না চেনো, যখন আল্লাহকে ভুলে যাও— তখন তুমি আসলে তোমার নিজেকেই ভুলে যাও। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন— وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنسَاهُمْ أَنفُسَهُمْ - "তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহও তাদেরকে করেছেন আত্মভোলা।" (৫৯:১৯) 

কারণ, যারা আল্লাহকে ভুলে যায় তারা আসলে শেষমেশ নিজেদেরকেই ভুলে যায়। এটি খুবই শক্তিশালী একটি মনস্তাত্ত্বিক আয়াত। তুমি যদি আল্লাহকে ভালোভাবে না জানো, তুমি নিজেকেই জানো না। 

অর্থাৎ, তোমার নিজের অস্তিত্বের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যমে তুমি নিজেকে আবিষ্কার করবে। জীবনের অর্থ খুঁজে পাবে। জীবনে প্রকৃত সুখ-শান্তি খুঁজে পাবে যখন তুমি আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবে। 

আর যদি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলো তবে তো তুমি বাঁচার জন্য কোনো অর্থ খুঁজে পাবে না। সম্ভবত এই কারণে আমরা চারদিকে এতো বেশি পরিমাণে মানসিক অসুস্থতা দেখতে পাচ্ছি। কারণ, মোটের উপর ধার্মিকতা হ্রাস পাচ্ছে। 

আল্লাহ কুরআনে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন— اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰهِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ - "জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।" (১৩:২৮) 

আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাতের মাঝেই জীবনের অর্থ খুঁজে পাই। 

— ড. ইয়াসির ক্বাদীর লেকচার অবলম্বনে। 

Post a Comment

0 Comments